কৃষ্ণকলি

কষ্ট (জুন ২০১১)

sraboni ahmed
  • ৬৪
  • 0
  • ৬৫
আজ একজন কৃষ্ণকলির গল্প বলব। শুরুটা হতে পারে এরকম-

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিল না তার মোটে,
মুক্তবেণী পিঠের 'পরে লোটে।
কালো? তা সে যেমন কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।।
ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে
ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে
কুটির হতে ত্রস্ত এলো তাই।
আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু
শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ।।
পুবে বাতাস এলো হঠাৎ ধেয়ে,
ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ।
আলের ধারে দাঁড়িয়ে ছিলেম একা,
মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ।
আমার পানে দেখেলে কিনা চেয়ে,
আমিই জানি আর জানে সেই মেয়ে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।।
এমনি ক'রে কালো কাজল মেঘ
জ্যৈষ্ঠ মাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি ক'রে কালো কোমল ছায়া
আষাঢ় মাসে নামে তমাল-বনে।
এমনি ক'রে শ্রাবণ-রজনীতে
হঠাৎ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।।
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
মাথার 'পরে দেয়নি তুলে বাস,
লজ্জা পাবার পায়নি অবকাশ।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।।


কবিগুরু বোধ হয় কালো মেয়ের মনের কষ্টটি ঠিক দেখতে পেয়েছিলেন। তাই তো এত সুন্দর করে বলেছেন 'কালো? তা সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।' আজো মেয়েরা শুধু কালো হবার কষ্টেই বিলীন হচ্ছে প্রতিদিন প্রতি নিয়ত। তবু স্বপ্ন দেখি কালো মেয়ের হরিণ-কালো চোখ কেউ দেখবে, দেখবে মুগ্ধ হৃদয় নিয়ে ভেতরের মানুষটির সৌন্দর্য । জানবে ঐ মেয়েটির মাঝেও কত সম্ভাবনার আলো জ্বলে রয়েছে। বেশি কথা না বাড়িয়ে মূল গল্পে চলে যাই-

১।
কি অদ্ভুত সুন্দর একটা ভোর! হালকা কুয়াশায় আছন্ন প্রকৃতি। ভোরের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে পাখিদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠছে চারপাশ। দু’একজন ফিরছে নামাজ পড়ে। ভোরের বিশুদ্ধ বাতাসে প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে কেউ কেউ বেড়িয়েছে লেপের তলা থেকে। এখনও তেমন জাঁকিয়ে বসেনি শীত। স্মরণী মুগ্ধ হয়ে দেখছিল ভোরের আলোয় রাঙা প্রকৃতি। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হয় ওকে। সারা সকালের কাজ এই ভোরেই সেরে রাখতে হয়। মায়ের ঘুম ভাঙ্গে দেরীতে। তাই নাস্তা বানানো, উঠান ঝাড়ু দেয়া থেকে শুরু করে বাসন কোসন ধোয়া সব কাজ গুছিয়ে রেখে তবেই ও গোসলে যেতে পারে। কলেজে যাবার অনুমতি ও এই শর্তে পেয়েছিল যে ভোরের কাজ সব করতে হবে প্রতিদিন। স্মরণীর ভীষণ ভাল লাগে এই সময়টা। পুরো বাড়ী যখন ঘুমায় ও তখন চুপচাপ কাজ করে যায় যন্ত্রের মত। কাজ করতে ওর ভালই লাগে। একা একা নিজের মনে গুনগুন করে গাইতে গাইতে নাস্তা বানায় আর মাঝে মাঝে প্রিয় আকাশের নানা রঙে রঙ্গিন হওয়া রূপ দেখে মুগ্ধ হয়।
কাল রাতে জমা মেঘ গুলো যেন মনের আকাশ থেকেও বিলীন হয়ে গেল কোন ফাঁকে। আজ যতই ঝড়বৃষ্টি ঝরুক ওর উপরে ওকে কলেজে যেতেই হবে। টিউটোরিয়াল শুরু হয়ে গেছে। পরীক্ষা ভাল দিতেই হবে। এতদূর এগিয়ে এসে ওর আর পিছানোর উপায় নেই। স্মরনী দ্রুত হাত চালায়। হাতের কাজ শেষ করতে করতে তবুও সাতটা বেজে গেল। কোন রকমে গোসলটা সেরে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে লাগাল এক ছুট কলেজের দিকে। রিকশায় যেতে যেতে চুল আঁচড়ে নিলো। পুরোটা রাস্তা পড়তে পড়তে গেল। কাল রাতে বই খোলারই সময় পায়নি। কারো মাথা ব্যথা নেই ওর পরীক্ষা নিয়ে। নাহ! এই মুহূর্তে ও সব কিছু ভুলে থাকতে চায়। পরীক্ষাটা ভাল দিতে হবেই। পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে দু’ঘণ্টা সময় পেল। চোখের পলক না ফেলে পড়ে যাচ্ছিল একটানা। পরীক্ষার হল থেকে বের হবার পর যেন নিঃশ্বাস নিতে পারল মেয়েটা আর ক্ষিদেটাও মনে করিয়ে দিল যে সকাল থেকে পেটে কিছু পড়েনি। রিয়াকে তাই বলল স্মরণী ‘চল ক্যান্টিনে যাই। খুব ক্ষিদে পেয়েছে।’
ক্যান্টিনের দিকে যেতে যেতে রিয়া জিজ্ঞেস করে ‘কাল কি হয়েছিল রে? অত কাঁদছিলি কেন?’
স্মরণী একটু থমকে যায়। তারপর জোর তাড়া লাগায় রিয়াকে ‘ তাড়াতাড়ি চল তো রিয়া। আর একটুপর অজ্ঞান হয়ে যাবো খেতে না পেলে।’
দুপুর হয়ে গেছে। রোদের তেজ বেড়েছে বেশ। অনেকেই পরীক্ষা শেষে আড্ডা দিচ্ছে এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে। বড় দীঘির পাড়ে বকুলতলায় এসে বসল ওরা। এটা ওদের প্রিয় জায়গা। শান বাঁধানো বকুলতলাটা শুধু ওদের নয় কলেজের সব ছেলেমেয়েরই প্রিয়। তাই জায়গাটা কখনই ফাঁকা থাকে না। আজ কেমন করে যেন একদম ফাঁকাই পাওয়া গেল।
‘এখন বল কি হয়েছিল কাল রাতে’ রিয়া পুনরাবৃত্তি করে প্রশ্নটা।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্মরণী বলে ‘কালো মেয়ের কপালে শনি লেগেছে।‘
‘মানে কি?!’
‘কাল ভাইয়া ভাবী একটা বিয়ের প্রস্তাব এনেছিল। পাত্র বড় ব্যবসায়ী। অনেক অনেক টাকার মালিক। গাড়ী বাড়ি সব কিছু আছে। পায়ের উপর পা তুলে সারাজীবন কাটিয়ে দেয়া যাবে। শাড়ি গয়না যা চাই সব সব দেবে।‘
‘ভালই তো। তুই কি বললি?’
রিয়ার কথা শুনে বাঁধভাঙ্গা হাসিতে ভেঙ্গে পড়ল স্মরণী।
‘এত হাসির কি হলো?!’ রিয়া অবাক হয়ে জানতে চায়।
হাসতে হাসতে কান্না পেয়ে যায় স্মরণীর। রিয়ার অগোচরে চোখ মুছে নিলো মেয়েটা।
‘ঠিকই বলেছিস। পাত্রের সবই ভাল শুধু তার বয়সটাই একটু যা বেশি। বাড়ীতে বড় বড় দুটি ছেলে রয়েছে। সম্প্রতি ছেলেদের মায়ের অকাল মৃত্যু ঘটায় লোকটি বড়ই বিপাকে পড়েছে। আর তাকে উদ্ধার করার জন্য আমার দয়াবতী ভাবি আমাকে ছাড়া আর কাউকে দেখলেন না উপযুক্ত।’
‘কি বলিস এই গুলা স্মরণী?!’ রিয়া এতক্ষণে বুঝতে পারল কেন অত কাঁদছিল ওর প্রিয় বন্ধুটা।
‘কালো মেয়ের জন্য এর চেয়ে ভাল পাত্র আর পাওয়া যাবে না। ভাবী ভাইয়া আর মা’কে বুঝাচ্ছিল। আর তারাও তাতে রাজী। শুধু ছোট ভাইয়া প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু ওর কথার কি দাম! যে সংসারে একটা পয়সা দিতে পারে না। তার কথা ওরা গুরুত্ব দিতে যাবে কেন বল?’
‘তুই কিছু বললি না?’
‘বারবার যে মেয়ের বিয়ে ভাঙ্গে তার বলার কিছু থাকতে পারে না। ছোট ভাইয়া একাই ঝগড়া করল সারা বাড়ির লোকের সাথে। ভাবী চিৎকার করে ভাইয়াকে বলে দেখব কোথায় বিয়ে দাও এই কালীর। এরপর বাড়ীতে যেন নরক ভেঙ্গে পড়ল। ’
রিয়ার রাগে সারা গা জ্বলতে লাগল। একটা মেয়ে কালো বলে তাকে এত অপমান সইতে হবে? গায়ের রঙই কি সব কিছু? স্মরণী ওদের ক্লাসে সবচেয়ে মেধাবী মেয়ে। কলেজের সবাই যাকে কৃষ্ণকলি বলেই চেনে যাকে নিয়ে স্যারদের কত স্বপ্ন! সারা কলেজ জানে স্মরণী অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হবে। অথচ ওর বাড়ীর লোকগুলি যেন উঠেপড়ে লেগেছে মেয়েটার জীবনটা নষ্ট করার জন্য। গতবছর ওর ভাই আর ভাবী কলেজে এসেছিল নাম কাটিয়ে নিতে। পড়তে দেবে না। তাদের বক্তব্য এমনিতেই কালো মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না তার উপর যদি বেশি ডিগ্রী নিয়ে ফেলে তাহলে আরও ছেলে পাওয়া যাবে না। ডিপার্টমেন্টের হেডস্যার এত রেগে গিয়েছিলেন এসব শুনে যে তিনি সোজা চলে গেলেন প্রিন্সিপ্যাল স্যারের কাছে স্মরণীর পড়ার খরচ কলেজ দেবে এই আবেদন নিয়ে। প্রিন্সিপ্যাল স্যার সব শুনে অনুমোদন দিয়ে দেন। কলেজের সাথে না পেরে স্মরণীর ভাই ভাবী বাড়িতে এসে তুমুল ঝগড়া বাঁধিয়ে দেয়। অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়ালো ওর ভাবী। এত বেশি বেশি কাজ করায় ওকে দিয়ে যাতে পড়ার সময় বের করতে না পারে। কলেজে যাওয়াও বন্ধ করতে চেয়েছিল কিন্তু মায়ের জন্য পারেনি। বাবা মারা যাবার পর থেকে বড় ভাই সংসার চালাচ্ছে। বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি দেখা শোনা করে। ছোট ভাইয়াটা বেশি দূর পড়াশোনা করল না। বাউণ্ডুলে জীবনযাপন করে। তবু এই ভাইটার জন্যই ওরা বেঁচে আছে।
স্মরণীর কান্না দেখে রিয়া বলে ‘কাঁদিস না। তুই এত মেধাবী একটা মেয়ে তোর মনে জোর কেন এত কম হবে? তারা যা বলবে তাই মেনে নিতে হবে নাকি? তোর অমতে ওরা কিছু করতে পারবে না। তুই শুধু সাহস হারাস না। প্লীজ!’
রিয়াকে জড়িয়ে ভীষণ কাঁদতে থাকে মেয়েটা।


এমন আজও আমাদের দেশে মেধার চাইতে মেয়েদের রঙরূপই মুখ্য। যে মেয়ের গায়ের রঙ যত সুন্দর তার কদর তত বেশি। মেয়ে মূর্খ হলেই বা কি যায় আসে! এহেন সমাজে কৃষ্ণকলিরা পরিবারের জন্য বোঝাস্বরুপ তা সে গুণেরই অধিকারী হোক। যাহোক বলছিলাম একজন স্মরণীর কথা যেই মেয়েটির দুঃখের দিন বুঝি শেষ হবার নয়। তারপর কি হলো? বলছি-

২।
পরীক্ষা শেষ। কলেজ বন্ধ। স্মরণীর দম বন্ধ হয়ে আসছে বাড়ীতে। সারাটাক্ষণ কাজ কাজ আর কাজ। বই ধরার কোন সুযোগ পাচ্ছে না। ভাবীর ছোট ভাই বেড়াতে এসেছে। সুযোগ পেলেই স্মরণীর পিছে লেগে থাকে। এত নোংরা তার দৃষ্টি যে স্মরণীর গা গুলিয়ে বমি পেয়ে যায়। ভাবী যেন দেখেও দেখে না। ভাইকে আরও বেশি ঠেলে দিচ্ছে ওকে উত্যক্ত করার জন্য। ছেলেটার ভাব ভঙ্গী খুব খারাপ। স্মরণী খুব ভয়ে ভয়ে থাকে সারাটাক্ষণ। ছোট ভাইয়াও নেই বাসায়। বন্ধুদের সাথে কোথায় যেন গেছে। স্মরণী বুঝতে পারছে খুব খারাপ মতলব নিয়ে ভাইকে আনিয়েছে ওর ভাবী। এইরকম আতঙ্কজনক অবস্থার মাঝে একদিন রিয়া এলো ওদের বাসায়। রিয়াকে দেখে স্মরণী যেন প্রাণ ফিরে পেলো। ছাদে নিয়ে যেয়ে সব বলল বান্ধবীকে। রিয়াও খুব ভয় পেল ওর কথা শুনে। ‘স্মরণী খুব সাবধানে থাকিস। ছোট ভাইয়ার কোন খবর পেলি?’
‘ নারে।’ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ‘ সেই বুড়োকে বিয়ে করাই মনে হয় উচিত ছিল আমার। অন্তত সম্ভ্রম হারানোর আতংকে তো দিন কাটাতে হতো না।’
‘ ছিঃ! এসব বলিস না তো। তুই চল আমার সাথে। আমার বাসায় থাকবি। খালাকে বলে চল। অন্তত যতদিন এই লম্পট বাসায় আছে ততদিন তুই আমার বাসায় থাক।‘
‘ মা রাজী হবে না রে। মা ভাবীর কথার বাইরে এক পা ফেলে না। আর ভাবী তো এই অনুমতি কোনদিনই দেবে না। থাক তুই অত ভাবিস না। আমি সাবধানে থাকব।’
রিয়ার মন তবু মানতে চাইছিল না। বুকের ভেতর চাপা ভয় নিয়ে সেদিনের মত বিদায় নিলো।
শীত পড়েছে আজ খুব। রাতের খাবারের পর তাই আজ আর কেউ জেগে নেই।সবাই ঢুকে পড়েছে লেপের তলায়। স্মরণীর রান্নাঘরের কাজ শেষ করতে করতে রাত বারোটা বেজে গেল। রুমে ফিরতেই দেখে বিছানায় লম্পটটা বসে আছে। ওকে দেখেই গা জ্বালানো একটা হাসি দিল। স্মরণীর হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। তবু গলায় জোর এনে রাগত স্বরে বলল ‘ আপনি আমার রুমে কি করেন?’
‘কেন তোমার রুমে কি আসা নিষেধ নাকি?’ আকাশ থেকে পড়ল যেন এমন একটা ভাব করল বদমাশটা।
‘হ্যাঁ নিষেধ। বের হন আমার রুম থেকে!’ রাগে সারা শরীর কাঁপছে ওর।
‘তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো স্মরণী। খুব মাইন্ড করলাম...হে: হে:...’ হাসতে হাসতে এগিয়ে আসতে লাগল এক পা এক পা করে। স্মরণী এক ছুটে নিচে নেমে গেল রান্না ঘরের দিকে। ওর পেছন পেছন ধাওয়া করে আসতে লাগল মূর্তিমান আতংক। রান্না ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল মেয়েটা। রান্না ঘরের দরজাটা মজবুত না। একটু জোরে ধাক্কা দিলেই খুলে যাবে। কি করবে স্মরণী বুঝে উঠতে পারছে না। ওদিকে প্রায় পৌঁছে গেছে পশুটা। হঠাৎ চোখ পড়ল মাছ কাটা বটিটার উপর। বটিটা কাঁপা কাঁপা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রুমের মাঝখানে। ওর কাছে আসার চেষ্টা করলেই ও কোপ দেবে শয়তানটাকে। রান্না ঘরের দরজায় জোর ধাক্কা পড়ছে যেকোনো মুহূর্তেই ভেঙ্গে পড়বে পুরনো মরচে ধরা ছিটকিনি। হঠাৎ করেই ভয়টা নাই হয়ে গেল স্মরণীর। শান্ত ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। ওর গায়ে টোকা দেবার আগেই খুন করে ফেলবে লম্পটটাকে। এই সিদ্ধান্ত নেবার পর মনটা শান্ত হয়ে গেছে।
দরজার ছিটকিনি ভেঙ্গে গেল ধাক্কার এক পর্যায়। রান্না ঘরের মাঝখানে বটি হাতে স্মরণীর রুদ্রমূর্তি দেখে একটু ভয় পেল লম্পটটা। ভয়ঙ্কর গলায় হিসহিস করে স্মরণী বলে ‘কাছে আসার চেষ্টা করিস না ভুলেও। একদম দুই টুকরা করে ফেলব।’
‘ছিঃ! ছিঃ! স্মরণী এইগুলা কি বল। বটি হাত থেকে নামাও। আরে তুমি এত ভয় পাইছো ক্যান? আমি তো তোমার সাথে একটু গল্প করতে আসছিলাম। আর তুমি এমনই ভয় পাইছো যে...’ কথা বলতে বলতেই এক পা এক পা করে এগোতে লাগল। স্মরণী বটি দিয়ে কোপ দিল সজোরে কিন্তু অল্পের জন্য মাথাটা বাঁচাতে পারল লম্পটটা। বেশ ভয় পেয়ে গেল ছেলেটা। বুঝতে পারল ও ঠাট্টা করছে না। সত্যি সত্যি খুন করে ফেলবে মেয়েটা। পিছিয়ে গেল বেশ কিছুটা। প্ল্যান আঁটতে লাগল কি করে বটি কেড়ে নেয়া যায় ওর হাত থেকে।
ঠিক সেইসময় কে যেন সদর দরজার কড়া নাড়তে লাগল। কে এলো এত রাতে?! লম্পটের দুই চোখে ভয় বাসা বাঁধল। ভীত গলায় জিজ্ঞেস করল ‘ তুমি কি পুলিশ ডাকছো নাকি?!’
স্মরণী বিস্ময় লুকিয়ে হিসহিস করে বলে ‘আজ তোর খবর আছে!’
ছেলেটার দুই চোখে আতংক বাসা বাঁধতে শুরু করল। উলটো ঘুরে দৌড় লাগালো। স্মরণী বটি হাতে নিয়েই সদর দরজা খুলল। ছোট ভাইয়া দাঁড়িয়ে। ভাইকে দেখে স্মরণীর সব শক্তি যেন নিমেষেই উধাও হয়ে গেল। বটি ফেলে ঢলে পড়ে ভাইয়ের গায়ে। ‘ কি হলো! এই এই স্মরণী!’
সেইদিন রাতেই পালালো ভাবীর লম্পট ভাইটা। ছোট ভাইয়াকে যমের মত ভয় পায় বদমাশটা। স্মরণীর জ্ঞান ফিরে আসার পর সবটা শুনে ছোট ভাইয়ার মাথায় যেন আগুন ধরে গেল। পারলে ভাবীকেই খুন করে ফেলে। বড় ভাইয়ের সাথে তুলকালাম বাঁধিয়ে আলাদা করে দিল ওদের। আর কঠিন ভাবে শাসালো ‘আমার বোনের গায়ে যদি কেউ একটা টোকাও দেয় সবার আগে তোরে আর তোর বউরে খুন করুম।’


স্মরণী অনার্সে ফার্স্ট হয়েছে। সারা কলেজে মেতে উঠেছে আনন্দে। কৃষ্ণকলির মনে আজ অফুরান আনন্দ। কি ঝলমলে রৌদ্রজ্জ্বল একটা দিন! সাফল্যের আনন্দ অনুরণিত হচ্ছে সারা কলেজ জুড়ে। কালো মেয়ের মুখের হাসিতে উড়ে গেল যেন হাজার প্রজাপতি।


( শেষ অংশ টুকু লেখকের কল্পনা। আসল বাস্তবতা ছিল অন্যরকম। মেয়েটি সেই কনকনে শীতের রাতে ভাবীর লম্পট ভাই কর্তৃক ধর্ষিত হয়। মেয়েটি নরপশুটিকে শেষরাতে মাছ কাটা বটি দিয়ে টুকরো টুকরো করে আর নিজেও ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দেয়। ঘটনাটির এই নির্মম দিকটি লিখতে বড়ই যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়েছি। শেষ পরিণতিটুকু বুঝি না লিখলেই ভাল হতো।
যারা এতক্ষণ সময় নিয়ে গল্পটি পড়লেন তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।)
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
sraboni ahmed @খোরশেদুল আলম পাঠে কৃতজ্ঞতা জানবেন। অনেক অনুপ্রাণিত হলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ।
sraboni ahmed @প্রজাপতি মন অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। গল্পটি যে আপনার মনকে ছুঁয়েছে এটাই অনেক বড় পাওয়া আমার জন্য। গল্পটা বাস্তবকে ঘিরেই। তবে সত্য ঘটনা অবলম্বনে নয়। ধন্যবাদ।
sraboni ahmed @শাহনাজ অনেক ধন্যবাদ গল্পটি পড়েছেন এই জন্য আর মন্তব্যের জন্যও। বাসা যদি বাসার মত না হয় তবে সেইখানেই মেয়েদের নিরাপত্তার অভাব অনেক বেশি থাকে।
sraboni ahmed @সীমা অসংখ্য ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
sraboni ahmed @সৌরভ ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
sraboni ahmed @আহমেদ সাবের পাঠে কৃতজ্ঞতা জানবেন। আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
খোরশেদুল আলম আপনার লেখা পড়ে খুব ভালো লাগলো আপনি খুব ভালো লেখেন, আপনার লেখার আরো উন্নতি কামনা করছি, সুন্দর লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
প্রজাপতি মন খুব ভালো লাগল লিখাটি ............... শেষ পরিণতি পড়ে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না। এটা কি সত্যি বাস্তব গল্প নয়া লেখকের কল্পনা? মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল।
শাহ্‌নাজ আক্তার শেষ অংশ টুকু পড়ে মনে হলো একটি মেয়ের নিজের বাসায় ও নিরাপত্তা নেই, এরকম প্রতিদিন বহু ঘটনা আমাদের সমাজে ঘটছে , বিশেষ করে এই আধুনিক যুগে ও কালো মেয়েদের অবহেলিত হতে হয় ....ভালো লিখেছ ....
ম্যারিনা নাসরিন সীমা গল্পের বিষয় , ধারা , সমাপ্তি সবই ভাল লাগলো । শুভকামনা ।

০৪ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪